।।_ঝাড়গ্রাম ও তার আশপাশের কিছু পিকনিক স্পট_।।
দেখতে দেখতে আরেকটি বছর শেষ হতে চললো। আবার একবার এলো শীত। আর তার সাথেই এলো পিকনিকের মরশুম। পিকনিক, বনভোজন, চড়ুইভাতি, ফিস্ট যে যাই বলুন না কেন, শীতকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলো এই পিকনিক। তাই আসুন আজ দেখে নিই, ঝাড়গ্রাম ও তার আশপাশের কিছু সুন্দর পিকনিক স্পট।
১) চিল্কীগড়:~ কনকদুর্গা মন্দির ও ডুলুং নদী ও তৎসংলগ্ন জঙ্গল ঝাড়গ্রামবাসীদের অনেক পুরানো ও প্রসিদ্ধ পিকনিক ডেস্টিনেশন। জঙ্গলের মাঝে পিকনিক ছাড়াও রয়েছে বোটিং ও মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুযোগ। এখন চিল্কীগড়ে পিকনিক পার্টিরা জলের সুবিধে পান।
২) সাতপাটি:~ কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত স্থানটি গত বেশ কিছু বছর ধরে পিকনিক করার জন্য ঝাড়গ্রামবাসীদের প্রায়োরিটি লিস্টে আছে। স্থানটি নদীর পাড়ে এবং এখানের ইউক্যালিপ্টাসের বনে গাছের ছায়ায় পিকনিক করার মতো সুবিধা আছে।
৩) কালিয়াম:~ বিনপুর থেকে শিলদা যাওয়ার রাস্তায় মালাবতীর জঙ্গল আসার আগে বড় যে ক্যানাল পড়বে সেটা দিয়ে ডানদিকে বেঁকে যেতে হবে। এখানে পরিত্যক্ত পাথর খাদান (ব্যাসাল্ট) জলে ভর্তি হয়ে বড়ো বড়ো ঝিলের সৃষ্টি হয়েছে। যে ঝিলের জলের রং সবুজ। তবে এই স্থানে জলে না নামাই ভালো।
৪) আউলগেড়িয়া:~ কলাবনী পেরিয়ে আগুইবনীর রাস্তা ধরে এগোলে ঘন জঙ্গল পেরিয়ে লেদাবহড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে পড়বে এই আউলগেড়িয়া গ্রাম। এখানে জঙ্গলের মাঝে বড়ো ঝিল রয়েছে যা মূলতঃ চাষবাসের জন্য কৃত্রিমভাবে বানানো হয়েছে।
৫) বান্দরবনী:~ দহিজুড়ি-লালগড় রোডের ফুলবেড়িয়া মোড় থেকে ডানদিকে বাঁকলে পড়বে বান্দরবনী গ্রাম। সেখানে রয়েছে কাঁসাই নদী। তার পাড়ের ইউক্যালিপ্টাস জঙ্গলের আলো-ছায়া পরিবেশ পিকনিকের জন্য আদর্শ।
৬) দুর্গাহুড়ি ইকো পার্ক:~ গুপ্তমনির রাস্তা হয়ে কুলটিকরী পৌঁছাতে হবে, এখানে আছে দুর্গাহুড়ির জঙ্গল ও তার মাঝে রয়েছে লেক। প্রকৃতির কোলে, শান্তিপূর্ণ জায়গায় পিকনিক করার আদর্শ জায়গা।
৭) কেতকীঝর্ণা: ঝাড়গ্রাম জেলার বুকে একটি অন্যতম সুন্দর পিকনিক স্পট। অবশ্যই এটি বেলপাহাড়িতে। পাহাড়-জঙ্গল-কেতকী ঝিলের এক অসাধারণ ব্লেন্ডিং এই জায়গাটা পিকনিক করার আদর্শ।
৮) শুশনিগেড়িয়া চেক ড্যাম:~ চার্চের রাস্তা ধরে সোজা বাঁশতলার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। টিয়াকাটির জঙ্গল পেরিয়ে সাইনবোর্ড অনুযায়ী ডানদিকে বাঁকলে ইউক্যালিপ্টাসের জঙ্গল পাওয়া যাবে, যা পেরোলেই আসবে সরকারের তৈরি এই চেকড্যাম বা জলতীর্থ প্রকল্প। এটি মুলতঃ পাড়বাঁধানো একটি বড়ো পুকুর। এর একপাশে বসার জায়গা ও গাছ লাগানো। মোটমাট শহরের কাছাকাছি পিকনিক স্পট হিসেবে মন্দ নয়।
৯) পলপলা খাল ও ভড়বনী বাঁধ:~ জাম্বনী থানার একদম শেষ প্রান্তে ঝাড়খন্ড ও বাংলার সীমানায় অবস্থিত এই শিরশা গ্রাম। শিরশা গ্রামের পাশেই পলপলা খালের ওপর নির্মিত এই ভড়বনি বাঁধ। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে বেরিয়ে চিল্কিগড় পৌঁছনোর পর সেখান থেকে চিচিড়া যাওয়ার পথে পলপলা খাল পেরোনোর পর ডান দিকে প্রায় ৩.৫ কিমি গেলে পৌঁছবেন এই শিরশা গ্রামে এবং গ্রামের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই এই ভড়বনি বাঁধ। আপনাদের সুবিধার্থে গুগল ম্যাপের লিংক দেওয়া রইলো।
১০) হাতিবাড়ি:~ গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের অন্তর্গত সুবর্ণরেখার তীরে অবস্থিত এই হাতিবাড়ি। এখানে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাংলো রয়েছে আপনি চাইলে এখানে রাতেও থাকতে পারবেন। এখানের সুর্যাস্ত চমৎকার। আর সুবর্ণরেখার প্রসিদ্ধ চিংড়ির কথা কেই বা না জানেন? ভাগ্যে থাকলে কম দামে পেয়ে যেতে পারেন।
১১) ঝিল্লি পাখিরালয়:~ বিশাল ঝিল্লি জলাধারের কোলে পিকনিক করার আদর্শ জায়গা। শীতকালের মরশুমে পরিযায়ী পাখিদের হাতছানি আর লেকের ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো রাজহাঁসের দল আপনাদের মন কেড়ে নেবে। এখন এখানে পিকনিক করার জন্য শেড করে দিয়েছে। এখানকার সূর্যাস্তের মাত্রা আলাদা।
১২) ডাহি ইকো পার্ক:~ নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ভসরাঘাট ব্রীজের পাদদেশে সুবর্ণরেখার তীরে গড়ে উঠেছে এই মনকাড়া উদ্যানটি। এখানে পিকনিক করার জন্য শেড এবং পিকনিক দলের জন্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
১৩) কুঠিঘাট:~ গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের অন্তর্গত এই জায়গাটা সুবর্ণরেখার তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন ঘাট। ইংরেজ আমলে এখানে একটি বড়ো নীলকুঠি ছিলো যার ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়। এর ঠিক পেছনেই বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা। এখানে শিব, কালি ও রাধাগোবিন্দের মন্দির রয়েছে। রয়েছে গোপীবল্লভপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির গেস্ট হাউস। যেখানে আপনি চাইলে রাতে থাকতে পারেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা:~
★ সব ঘোরার জায়গায় পিকনিক করা যায়না। আর কিছু কিছু জায়গায় পিকনিক করা উচিত নয়। আমরা আমাদের লিস্ট সেভাবেই বানিয়েছি।
★ পিকনিকের সময় থার্মোকলের থালা-বাটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গ্লাস প্লাস্টিকের ছাড়া উপায় নেই কিন্তু পিকনিকের পরে সেই গ্লাসগুলো অবশ্যই গুছিয়ে নিয়ে আসবেন। জায়গাটা যাতে নোংরা না থাকে এটা আমাদের অনুরোধ।
★ বেশি উচ্চ-আওয়াজে গান শুনবেন না। নিজেদের মধ্যে আনন্দ করুন। মনে রাখবেন, যেখানে যাবেন সেটি কিন্তু প্রকৃতির কোলে বলেই আপনি সে জায়গায় যাচ্ছেন। সেখানে মানুষ বাদেও অন্যান্য প্রাণীরা থাকে। তাদের অসুবিধা করবেন না।
★ সব জায়গাগুলো হাতি-প্রবন। তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই খোঁজ নেবেন সেখানে হাতি বেরিয়েছিল কিনা।
Info - চেনা অচেনা ঝাড়গ্রাম.
For more details kindly visit - https://ryasktourismin.ryasktourism.in/
No comments:
Post a Comment
Please Do Not Entry Any Spam Link In Th Comment Box